রাতে আদালতে জবানবন্দির পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর * বাড়িতে ফিরে আসার পরও পরিবারের গোপনীয়তা
ইসলামি বক্তা হিসাবে পরিচিত আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান নিখোঁজের ৮ দিন পর ফিরে এসেছেন। ব্যক্তিগত কারণে আত্মগোপন করেছিলেন বলে তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন। শ্বশুরবাড়িতে ফিরে আসার পর পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়। এছাড়া তার তিন সঙ্গীকেও হেফাজতে নেওয়া হয়।
সন্ধ্যায় তাদের আদালতে হাজির করা হয় জবানবন্দি নেওয়ার জন্য। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন শুক্রবার ডিবি কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। রাতে রংপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কেএম হাফিজুর রহমানের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার পর নিজ নিজ জিম্মায় তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ১০ জুন নিখোঁজের সময় ত্ব-হা রাজধানীর মিরপুরে অবস্থান করছিলেন। তখন রাত ২টা ৩৭ মিনিট। সর্বশেষ কথা হয়েছিল তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন নাহার সারার সঙ্গে। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে সেখান থেকে ব্যক্তিগত প্রাইভেট কারে রংপুরের উদ্দেশে রওয়ানা দেন।
তার সফর সঙ্গী ছিলেন বগুড়া জেলার শিবগঞ্জের বাসিন্দা মোহাম্মদ ফিরোজ আলম, গাড়িচালক রংপুর নগরীর উত্তর আশরতপুরের বাসিন্দা আমির হোসেন ফয়েজ ও রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীর কাফ্রিখাল এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মুহিত। তারা ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় যান।
সেখানে ত্রিমোহনী এলাকায় বন্ধু সিয়াম ইসলামের বাসায় ওঠেন ত্ব-হা ও তার সঙ্গীরা। সেখানেই এতদিন আত্মগোপন করে ছিলেন তারা। শুক্রবার সকালে গাইবান্ধা থেকে তারা তিনজন রংপুরে আসেন। পথে মিঠাপুকুরের জায়গীর কাফ্রিখালে আব্দুল মুহিতকে নামিয়ে দিয়ে আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান গাড়িচালকসহ দুপুর সাড়ে ১২টায় রংপুরে শ্বশুরবাড়িতে প্রথম স্ত্রীর কাছে ফিরে আসেন। ডিবি পুলিশ খবর পেয়ে বেলা ৩টায় নগরীর আবহাওয়া অফিসসংলগ্ন মাস্টারপাড়ায় শ্বশুর আজহারুল ইসলামের বাসা থেকে ত্ব-হাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। পরে গাড়িচালকসহ অপর দুই সঙ্গীকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
এক প্রশ্নের উত্তরে আবু মারুফ হোসেন বলেন, সরকারকে বা দেশের মানুষকে বিব্রত করতে আত্মগোপন করেননি আবু ত্ব-হা। এটা উদ্দেশ্যমূলক নয়। এখন পর্যন্ত এটা মনে হয়নি। এত কিছু ভেবে তারা করেননি। আবু ত্ব-হা শিক্ষিত ছেলে। তাই সে ফোন বন্ধ করে রেখেছিল। সে জানে তার ফোন যদি অন করা হয় তাহলে তাকে শনাক্ত করা যাবে। তাই সে ফোন সুইচড অফ করে রেখেছিল। তারা সবাই একসঙ্গে ছিলেন। একই বাড়িতে ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে রংপুরের সহকারী পুলিশ কমিশনার আলতাফ হোসেন, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার উজ্জ্বল কুমার রায়, কোতোয়ালি মেট্রোপলিটন থানার ওসি আব্দুর রশীদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ আবু ত্ব-হা ও তার সঙ্গীদের সাংবাদিকদের মুখোমুখি করেনি। এ বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য হলো-যেহেতু এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ সংঘটনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি; তাই তাদের প্রেসের মুখোমুখি করা হচ্ছে না। আদালতে তারা যে জবানবন্দি দেবেন সে আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ত্ব-হার বাড়ি রংপুর নগরীর সেন্ট্রাল রোডের আহলে হাদিস মসজিদ এলাকায়। তবে তিনি প্রথম স্ত্রী হাবিবা নূর, দেড় মাসের ছেলে ও তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে শালবন মিস্ত্রিপাড়া চেয়ারম্যান গলিতে ভাড়া বাসায় থাকেন। নিখোঁজের বেশ কিছুদিন আগে তিনি নগরীর মাস্টারপাড়ায় বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।
জানা যায়, আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানের অবস্থান আরও আগেই জানতে পারে তার পরিবার। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে তারা সেটা গোপন রাখতে চেয়েছে। ত্ব-হার পরিবারের এমন আচরণে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
থানায় জিডি সেই মেহেদি হাসানের : নিখোঁজ থাকা অবস্থায় আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের প্রথম স্ত্রীর কাছে মিথ্যা পরিচয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে যার ছবি ও নাম ব্যবহার করা হয়েছিল সেই মেহেদি হাসান পেশায় একজন দন্তচিকিৎসক। এ সংক্রান্ত নিউজ দেখে শুক্রবার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তিনি।
জিডিতে মেহেদি হাসান উল্লেখ করেন, বাসায় বসে ফেসবুক চালানোর সময় হঠাৎ দেখতে পাই আমার ছবি ও নাম ব্যবহার করে ‘আবু ত্ব-হা আদনানের স্ত্রীর কাছে মুক্তিপণ চাওয়া মেহেদির অস্তিত্ব পায়নি পুলিশ’ লিখে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। ওই সংবাদটি ফেসবুক, অনলাইন ও ইউটিউবে প্রচার হয়। তিনি লেখেন-‘Mehdi Hasan’ এই ফেক আইডি থেকে মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে যা আমার নিজস্ব আইডি নয়।